Monday, April 13, 2020

পুলিশ কিডন্যাপ - সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ

পুলিশ কিডন্যাপ - সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ

পুলিশ ইন্সপেক্টর নয়নের একমাত্র ছেলে রাতুল। অষ্টম শ্রেণীতে পরে। বৈষয়িক জ্ঞান বুদ্ধি একটু কম। রাতুলের বন্ধুরা মজা করে বলে; তুই যখন পেটে ছিলি, আন্টি তখন আয়োডিন যুক্ত লবন খাননি বলেই তোর বুদ্ধিটা কম হয়েছে। আবার কেউবা বলে, আন্টি খায়নি তো কি হয়েছে? রাতুল এখন খেলেই হবে। রাতুলও তাই সময় সুযোগ পেলেই লবন খায়! ওরা উপজেলা পরিষদের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকে। দোতলা বিল্ডিংয়ে দুটি করে মোট চারটি ফ্লাট। উপরের পূর্ব দিকের ফ্ল্যাটে থাকে রাতুলরা। ওদের বরাবর নিচে আফরোজা এবং সুফিয়ানরা। পশ্চিম দিকের নীচের ফ্ল্যাটটায় থাকে মৃদুলরা। আর উপরের পশ্চিম দিকের ফ্ল্যাটটি সংস্কারের জন্য খালি রয়েছে।

মৃদুল, আফরোজা, সুফিয়ান এবং রাতুল ওরা চার জনই প্রায় সমসাময়িক। রাতুল যেমন বোকা, মৃদুল তেমনি চালাক। রাতুলের আম্মা টেলিভিশনে ক্রাইম পেট্রোল দেখে প্রতিদিন। রাতুলও তা উপভোগ করে বেশ। মনে মনে সে ওর আব্বাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। ভাবে বড় হয়ে সেও একজন পুলিশ হবে। ক্রাইম পেট্রোলে সে প্রতিদিন যা দেখে তা মৃদুল, আফরোজা এবং সুফিয়ানের সঙ্গে শেয়ার করে। বিশেষ বিশেষ অংশ আবার রাতুল অভিনয় করেও দেখায়। মৃদুল, আফরোজা এবং সুফিয়ানের কাছে জানতে চায় রাতুল, প্রতি এপিসোডেই কেন মাস্তানদের পাকড়াও করে পুলিশ? পুলিশ কেন মাস্তানদের হাতে পাকড়াও হয় না? মাস্তানদেরও তো পিস্তল আছে! আফরোজা এবং সুফিয়ান হাসে, মৃদুল বলে যাও তুমি পুলিশকে পাকড়াও করো।

রাতে ঘুম আসছে না রাতুলের। ভেবে কোনো কুল পাচ্ছে না, কিভাবে পুলিশ কিডন্যাপ করা যায়। সে যদি একবার এই পুলিশ কিডন্যাপ করতে পারে তাহলে ওকে আর কেউ বোকা বলতে পারবে না। সবাই যা পারেনি ও তাই করে দেখাবে। ভাবতে থাকে রাতুল। হঠাৎ একটা আইডিয়া খেলে যায় ওর মাথায়। আওলাদ আংকেলকে কিডন্যাপ করলে কেমন হয়? সে তো প্রতিদিন ওদের বাসায় আসেই। এই আওলাদ হচ্ছে পুলিশের একজন কনস্টেবল ভুঁড়িওয়ালা নাদুস নুদুস মানুষ। পরিবার গ্রামে থাকে বলে খাওয়া দাওয়া রাতুলদের বাসাতেই করে। বিনিময়ে বাজার ঘাট এবং ফুট ফরমায়েশগুলো করে দেয়। ভাবতে থাকে রাতুল আর মিলাতে থাকে তার পরিকল্পনা। কিন্তু আওলাদ আংকেলকে কিডন্যাপ করে রাখবে কোথায়? ভাবতে ভাবতে মাথায় আসে পাশের খালি ফ্ল্যাটটার কথা।

স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। দুপুর বেলা সবাই যখন বিশ্রামে ব্যস্ত রাতুল তখন কাউকে না জানিয়ে পাশের দোতলার ফ্ল্যাটটার সকল জানালা দরজাগুলো বন্ধ করে রাখে। যদিও পরিত্যক্ত ফ্ল্যাটের বেশির ভাগ জানালা দরজাগুলোই ভাঙা। মাস্টার বেডটা মোটামুটি পরিষ্কার করে একটা চাদর, বালিশ, গ্লাস, প্লেট, পানি মোটামুটি সবই গুছিয়ে রাখে। বিকেলে মৃদুল, আফরোজা এবং সুফিয়ান রাতুলকে খেলার জন্য ডাকতে আসে। রাতুলের হাতে অনেক কাজ এবং সময় নাই বলে সরিয়ে দেয় ওদের। রাতে শুয়ে ভাবতে থাকে কিভাবে পাশের ফ্ল্যাটে আওলাদ আংকেলকে নিয়ে আটকানো যায়। হ্যাঁ, আম্মুর ঘুমের ওষুধ। রাতুলের যেন খুশির শেষ নেই। কেউ যা পারেনি ও তাই করতে যাচ্ছে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে রাতুল।

দুপুরের খাওয়া শেষ করে নয়ন চলে যায় থানায়। টেবিলে আওলাদের জন্য খাবার পরিবেশন করে রাতুলের আম্মা রাতুলকে বলে, বাবা আমি এখন একটু রেস্ট নিবো। যদি ঘুমিয়ে পরি তাহলে তোমার আওলাদ আংকেল এলে খেয়ে নিতে বলবে। বেড রুমের দিকে চলে যায় রাতুলের আম্মা। এই সুযোগে রাতুল আগেই গুঁড়ো করে রাখা ঘুমের ওষুধ মিলিয়ে দেয় ভাত তরকারি এবং পানির মাঝে। যথা সময়ে চলে আসে আওলাদ। রাতুল বলে, আংকেল কিছুক্ষন পর বাসায় গেস্ট আসবে তাই আম্মু বলেছেন আজকে খাওয়ার পর আপনাকে পাশের ঐ খালি ফ্ল্যাটে বিকেল পর্যন্ত থাকতে। ওখানে আম্মু সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ঝটপট খেয়ে নেয় আওলাদ। খাওয়ার পর সে রাতুলকে সাথে নিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে যায়। মেঝের বিছানাতে গা এলিয়ে দেয় সে। রাতুল বলে আংকেল একটা গল্প বলেন। রাতুলের সমান আওলাদেরও একটা ছেলে ছিল। গ্রামের পুকুরে ডুবে মারা গেছে, তাও প্রায় দুই বছর হতে চলেছে। রাতুলকে সে অনেক আদর করে।
কিসের গল্প শুনবে বাবা? বাঘ-ভাল্লুক, দৈত্য-দানব, নাকি রাজকুমারীর গল্প?
রাতুল বলে আংকেল আজকে একটা কিডন্যাপের গল্প শুনাবেন।
ঠিক আছে বাবা তাই হবে। গল্প বলতে থাকে আওলাদ। দুচোখে নেমে আসে তার রাজ্যের ঘুম। কথা মাঝে মাঝেই জড়িয়ে আসছে তার। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা আওলাদ। হারিয়ে যায় তন্দ্রাপুরিতে। রাতুল আওলাদের হাত, পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে মোটা টেপ লাগিয়ে দেয়। দরজা ভালো করে বন্ধ করে বেরিয়ে আসে সে। ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে মৃদুল, আফরোজা এবং সুফিয়ানের জন্য। যথা সময় চলে আসে ওরা।
রাতুল গর্ব করে বলতে থাকে দেখিস এখন থেকে আমাকে আর কেউ বোকা বলতে পারবে না।
মৃদুল, আফরোজা এবং সুফিয়ান সবাই একত্রে বলে উঠে, কেনরে হাদা? তুই কি করেছিস?
দেখবি দেখবি সময় হলেই দেখবি।
খেলা শেষে সবাই চলে যায় যার যার বাসায়। রাতুলের যেন মুই কি হনুরে অবস্থা। খুব দ্রুতই সে হতে যাচ্ছে বীরপুরুষ। এই ভেবে সে নিজেকে মোটেই স্থির রাখতে পারছে না। এদিকে থানায় হৈচৈ পরে যায়, আউলাদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে। তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে সম্ভাব্য সকল জায়গায়। কিন্তু সকল চেষ্টাই বৃথা পুলিশ বাহিনীর। ঘটনাটা বাবার কাছে শোনার পর রাতুলের নিজেকে হিরো হিরো মনে হতে থাকে।

এদিকে মাঝ রাতে যখন আওলাদের জ্ঞান ফিরে আসে তখন সে ছটফট করতে থাকে হাত পা খোলার জন্য। পা দিয়ে মাঝে মাঝেই মেঝেতে আঘাত করতে থাকে সে। ঘুমাতে পারেনা মৃদুল। ভুতের ভয়ে চলে আসে সে আম্মুর রুমে। আব্বুটা কাজে ঢাকায় গিয়েছেন। আম্মু বলে, শোনো মৃদুল কাল থেকে ছাদে খেলতে যেওনা। উপরের ফ্ল্যাটটি অনেক দিন ধরে পরিত্যক্ত। খারাপ কিছু থাকতেই পারে। সকালে নাস্তা করেই চুপিসারে রাতুল চলে যায় পাশের ফ্ল্যাটে। গিয়ে দেখে আওলাদ আংকেল হাত পা বাঁধা অবস্থায়ই বসে আছে। রাতুলকে দেখে ইশারায় বাঁধন খুলে দিতে বলে আওলাদ।
রাতুল আওলাদের মুখের টেপটা খুলে দেয়, কথাগুলো শোনার জন্য। বলে আংকেল আমি আপনার হাত পায়ের বাঁধন খুলবো না। আমি আপনাকে কিডন্যাপ করেছি।
কিডন্যাপ? আমাকে? কিন্তু কেন?
কারণ এখনো কেউ পুলিশকে কিডন্যাপ করতে পারেনি, তাই আমি আপনাকে কিডন্যাপ করেছি। এখন থেকে আমাকে আর কেউ বোকা বলতে পারবে না।
রাতুলের সহজ সরল কথায় কনস্টেবল আওলাদের চোখ ছলছল করে উঠে। মনের জানালায় উঁকি দিতে থাকে তার ছেলের নানা স্মৃতি। আওলাদ বলে শোনো বাবা, তুমিতো পুলিশ কিডন্যাপ করেই ফেলেছো। এবার আব্বু এবং আম্মুকে আসতে বলো। না হলে তো খবরটি আর প্রচার হবে না। কেউ জানবেও না।
রাতুল জানতে চায় মৃদুল, আফরোজা এবং সুফিয়ানকেও বলবে কিনা? আওলাদ বলে আগেই না, ওরা পরে আসবে। আগে আব্বু আম্মুকে খবর দাও।

সৈয়দ মাহাবুবুর রশিদ - নাগরিক সাংবাদিক বাংলাদেশ
রাতুল ওর আব্বু এবং আম্মুকে নিয়ে আসে পশ্চিমের ফ্ল্যাটটায়। আওলাদের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায় নয়ন। খুলে দেয় হাত পায়ের বাঁধন। জানতে চায়, কি করে এমন হয়েছে? আওলাদ ওদের আশ্বস্ত করে বলতে থাকে, ওর কিডন্যাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনা। রাতুল তখন রুমের এদিক ওদিক পায়চারি করছে। আওলাদ নয়নকে বলতে থাকে স্যার, এর পূর্বে কখনো কেউ পুলিশকে কিডন্যাপ করতে পারেনি! আমাদের বীর রাতুলই প্রথম পুলিশকে কিডন্যাপ করেছে। আয় বাবা আমার বুকে আয়। বীর দর্পে এগিয়ে আসে রাতুল আওলাদ আঙ্কেলের কাছে। রাতুলকে বুকে টেনে নেয় আওলাদ। ইন্সপেক্টর নয়ন চোখে সর্ষে ফুল দেখে। বলে রাতুলের মা, আমাকে জলদি একগ্লাস ঠান্ডা পানি দাও।
১১ এপ্রিল ২০২০ইং 
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

নাগরিক সাংবাদিক বাংলাদেশ Citizen Journalist Bangladesh

No comments:

Post a Comment

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। খুব শীঘ্রই আপনার উত্তর দেওয়া হবে।

Recent Job circular 2024 - চাকরির খবর ২০২৪ - জব সার্কুলার ২০২৪ - নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪ - Job Circular

Categories

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (14) বাংলাদেশ রেলওয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (11) বিদেশের ভিসা ও চাকরির খবর (81) বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (22) বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (47) বেসরকারি চাকরির খবর (668) ব্যাংকের চাকরির খবর (52) মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (44) মার্কেটিং নিয়োগ (59) মেডিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যালস (17) রেলওয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (5) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ (99) সরকারি চাকরির খবর (985) সাপ্তাহিক কর্মক্ষেত্র পেপার (2) সাপ্তাহিক কর্মসংস্থান পেপার (2) সাপ্তাহিক চাকরির খবর পত্রিকা (953) সাপ্তাহিক চাকরির ডাক পত্রিকা (213) সাপ্তাহিক চাকরির সংবাদ পত্রিকা (31) সিকিউরিটি গার্ড/সুপারভাইজার (30) সিটি কর্পোরেশন চাকরির খবর (16) সেনাবাহিনী চাকরির খবর (45)